সাম্প্রতিক নোটিশ

ভ্রান্ত মতবাদ

June 17, 2024 ভ্রান্ত মতবাদ
ভ্রান্ত মতবাদ

১. ‘আল্লাহর ওপর ইমান’-সংক্রান্ত আলোচনার (পৃ. ৫১) অধীনে ‘আল্লাহ’র সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে,

’الله علم على الأصح اسم للذات الواجب الوجود المستجمع بجميع صفات الكمال.
আল্লাহ ওই চিরন্তন সত্তার নাম, যাঁর অস্তিত্ব অবশ্যম্ভাবী, যিনি সমস্ত গুণাবলির অধিকারী।’

এখানে অসতর্কবশত সংজ্ঞার শেষাংশের অনুবাদ ভুল করার কারণে কথাটি বিকৃত হয়ে গেছে। আল্লাহ তাআলা সমস্ত ‘সিফাতে কামালে’র অধিকারী। অর্থাৎ কামাল (পরিপূর্ণতার) যত গুণ রয়েছে, সব গুণের অধিকারী তিনি। এমন কোনো সিফাতে কামাল নেই, যা তাঁর নেই। লেখকের অনুবাদ থেকে ‘কামাল’ শব্দটির অনুবাদ বাদ পড়ায় এখন এর অর্থ দাঁড়িয়েছে, আল্লাহ সমস্ত গুণের অধিকারী; সেই গুণ পূর্ণতার গুণ হোক বা ত্রুটির গুণ হোক। আল্লাহকে সমস্ত গুণের অধিকারী বললে অপরিহার্যভাবে তাঁর সত্তার ওপর সর্বপ্রকার দোষ-ত্রুটি আরোপিত হয়, যা থেকে তাঁকে পূতপবিত্র ঘোষণা করা ইমান আনয়নের প্রথম শর্ত। অসতর্কতাবশত এই অনুবাদটি ছুটে যাওয়া বিস্ময়ের ব্যাপার নয়; বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এতকাল ধরে, এতগুলো সংস্করণ হওয়ার পরে এটা অক্ষুণ্ন থাকা। অথচ বইটা বেফাক বোর্ডে ফজিলত ২য় বর্ষে পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত। দেশের লাখো লাখো আলিম-তালিবুল ইলম গত এক যুগে এটা অধ্যয়ন করেছেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষও এটা যথাযথ পর্যালোচনা করেই পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এছাড়াও আরও অনেক বিদগ্ধ আলিমের সম্পাদনার কথা বইয়ের ভূমিকায় উল্লেখিত হয়েছে। যাহোক, আশা করছি, পরবর্তী সংস্করণে এটা শুধরে নেওয়া হবে। অন্যথায় ‘আল্লাহ’র ব্যাপারে আমাদের আর অমুসলিমদের সংজ্ঞায় পার্থক্য থাকবে না।

২. ‘আল্লাহর সত্তার প্রতি ইমানের কয়েকটি মৌলিক বিষয়’-সংক্রান্ত আলোচনার অধীনে (পৃ. ৫৮) লেখা হয়েছে,

‘তিনি স্থান ও কালের গণ্ডি হতে মুক্ত। কারণ স্থান হয়ে থাকে দেহবিশিষ্ট বস্তুর জন্য আর আল্লাহ তাআলা দেহ থেকে পবিত্র। তাঁর কোনো স্থান নেই—অর্থাৎ না তিনি আসমানে থাকেন, না জমিনে, না পূর্বে, না পশ্চিমে। সমগ্র জগৎ তাঁর সামনে একটা অণু পরিমাণ বস্তু সমতুল্য। তিনি কীভাবে তার মধ্যে সমাহিত হতে পারেন? বরং তিনি সর্বত্র বিরাজমান। কোনো স্থানের কোনো কিছু তাঁর অগোচরে নয়।’

লেখকের উপরিউক্ত বক্তব্যে সুস্পষ্ট স্ববিরোধিতা রয়েছে। উপরন্তু শেষাংশে তার বক্তব্য ভ্রান্ত ফেরকার বক্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়েছে। তার কথার প্রথমাংশই শেষাংশকে সমর্থন করে না। প্রথমে তিনি আল্লাহ তাআলাকে সকল স্থান ও কালের গণ্ডি থেকে মুক্ত ঘোষণা করলেন। আকাশ বা পৃথিবী কোনোটিই তাঁর অবস্থানস্থল নয়—পরিষ্কার ভাষায় এটা জানিয়ে দিলেন। কোনো দিকে তিনি সমাহিত নন—এটাও স্পষ্ট করলেন। কিন্তু এর পরক্ষণেই তিনি লিখলেন, ‘বরং তিনি সর্বত্র বিরাজমান’।

আচ্ছা, ‘সর্বত্র’ অর্থ কী? অভিধান বলছে, এর অর্থ হলো : (ক) সব জায়গায়, (খ) সর্বস্থানে, (গ) সবদিকে। এই তিনটি অর্থের কোনটি আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য? জায়গা, স্থান ও দিক—এ সবই অনিত্য ও নশ্বর; আল্লাহ তাআলা নিত্য ও অবিনশ্বর। এগুলোর আদি আছে; পক্ষান্তরে আল্লাহ অনাদি। আর সর্বস্বীকৃত আকিদা হলো, তাঁর অবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসে না। সুতরাং জায়গা, স্থান ও দিক সৃষ্টির পরে তিনি এগুলোর ভেতরে প্রবেশ করবেন না। উপরন্তু জায়গা, স্থান ও দিক দেহবিশিষ্ট সত্তার বৈশিষ্ট্য আর আল্লাহ দেহ থেকে পূতপবিত্র। তাহলে তিনি কীভাবে সব জায়গায় অবস্থান করবেন? এটা তো হিন্দুয়ানি আকিদার নামান্তর। তদুপরি এটা তাঁর অবমাননাও বটে; কারণ এর দ্বারা নোংরা জায়গায়ও তাঁর অবস্থান অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়।

হোয়াটসাঅ্যাপ চ্যাট
মেসেঞ্জার চ্যাট