সাম্প্রতিক নোটিশ

কওমী মাদরাসার গঠনতন্ত্র যে ভাবে হওয়া উচিত

August 21, 2024 শিক্ষাঙ্গন
কওমী মাদরাসার গঠনতন্ত্র যে ভাবে হওয়া উচিত
মহিউদ্দীন ইউশা
মাদরাসার গঠনতন্ত্র
কওমি মাদরাসা
 উদ্দেশ্যবলী: অত্র মাদরাসার উদ্দেশ্যবলী নিম্নরূপ হবে-
(ক) ইসলামী শিক্ষাদান- যা কওমী মাদরাসা সমুহের প্রাণকেন্দ্র দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসার নেসাব অনুসারে আরবী, বাংলা, ইংরেজী, উর্দু, ফার্সী ভাষায় জ্ঞানার্জন অথবা ইসলাম প্রচারে সহায়ক ও পরিপূরক হবে। সুতরাং উক্ত প্রতিষ্ঠানকে কখনও সরকারী করা যাবে না।
(খ) ইলম ও আমলের মাধ্যমে মুসলিম জনসাধারনের মধ্যে ইসলামী জিন্দেগীর সহীহ নমুনা পেশ করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা যাতে পরষ্পর মুহাব্বত, হামদার্দী ও দয়ার মনোভাব পয়দা হবে এবং যাতে জাতির উন্নতিকল্পে আত্নত্যাগের প্রেরণা, ইসলামী পরিবেশ, ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ও জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ পয়দা হয়।
(গ) জনসাধারনের মধ্যে ইসলামের প্রচার (তাবলীগ) ও শিক্ষাদানের (তা’লীম) জন্য উপযুক্ত উস্তাদ, আলীম-হাফিজ, ক্বারী, মুবাল্লিগ ও দ্বীনের খাদেম তৈরী করা এবং তাদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জাতির খিদমতের উপযোগী করে গড়ে তোলা।
৪. আদর্শ:
(ক) উক্ত প্রতিষ্ঠান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত তথা মাযহাবের অনুসারী ও দেওবন্দী বুযুগানে দ্বীনের মতাবলম্বী হবে।
(খ) উপরোক্ত আদর্শের সংরক্ষণ ও হিফাযত করা মাদরাসার প্রত্যেক সদস্য, শিক্ষক-ছাত্র, কর্মচারী ও মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের পবিত্র দায়িত্ব।
(গ) কোন শিক্ষক-ছাত্র, কর্মচারীর জন্য, প্রচলিত রাজনীতি বা এমন সব সংগঠন এবং সভা-সমিতিতে যোগদান করা নিষিদ্ধ যা মাদরাসার আদর্শ, উদ্দেশ্য ও স্বার্থের পরিপন্থী।
৫. মাদরাসার পরিচালনা পরিষদ: মোট ৫টি।
(ক) মাজলিসে শুরা
(খ) আ-জীবন সদস্য পরিষদ বা উপদেষ্ঠা পরিষদ
(গ) কার্য নির্বাহী পরিষদ
(ঘ) মাজলিসে ইলমী
(ঙ) মাজলিসে আসাতিজা
৬. মাজলিসে শু’রা গঠন:
(ক) এলাকার হাক্কানী উলামায়ে কিরাম ও দ্বীনদার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উক্ত মাজলিসে শুরা গঠন করবেন। যাদের এ ধরনের মাদরাসা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং কওমী মাদরাসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকতে হবে।
(খ) মাজলিসে শু’রার সদস্যগণ এমন একজন আলেমে দ্বীনকে মাজলিসে শুরার সভাপতি নিযুক্ত করবেন যিনি ইলম, আমল, তাকওয়া ও পরহেজগারীর দিক দিয়ে সকলের শ্রদ্ধাভাজন হবেন।
(গ) মাদরাসার মুহতামিম পদাধিকার বলে উক্ত শু’রার সহ-সভাপতি হবেন। তাছাড়া কার্য নির্বাহী পরিষদের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সম্পাদক অত্র পরিষদের সদস্য থাকবেন।
৭. মাজলিসে শু’রার দায়িত্ব ও ক্ষমতা:
(ক) মাদরাসা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়ন, প্রচলিত আইন বাতিল কিংবা সংশোধন-সংযোজন করার অধিকার উক্ত মাজলিসে শু’রার থাকবে। মাদরাসার সর্বসময় ও সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী উক্ত মাজলিসের শু’রা।
(খ) মাদরাসার মূলনীতি সমূহ ও আদর্শের সংরক্ষণ করার দায়িত্ব মাজলিসে শু’রার উপর থাকবে।
(গ) মাদরাসার আইন-শৃংখলা রক্ষার্থে বিভিন্ন বিভাগ খোলা, মাদরাসার বিশেষ স্বার্থে প্রয়োজন বোধে মাজলিসে আমেলা গঠন করা কিংবা বিভিন্ন স্থায়ী-অসস্থায়ী কমিটি গঠন করা, নিছাবে তা’লীম সংশোধন ও সংযোজনের জন্য দ্বীনি শিক্ষা বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে সাব কমিটি গঠন করা, সাব কমিটি কর্তৃক পেশকৃত নেছাবে তা’লীমের মঞ্জুরী দেয়া।
(ঘ) শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ, অপসারণ, বেতন ভাতা নির্ধারণ, পদ ও দায়িত্ব নির্ধারণ এবং বদলী করার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া।
(ঙ) মাদরাসার ‘দফতরে ইহতেমামে’ কিংবা দফতরে তা’লীমাতে অথবা যে কোন বিভাগ পরিদর্শন করে মন্তব্য বহিতে লিখিত মন্তব্য পেশ করার ইখতিয়ার মাজলিসে শুরার থাকবে। যা পরবর্তীতে মাজলিসে শু’রার বৈঠকে আলোচনা হবে।
(চ) পরিচালনা পরিষদ গঠন করা এবং দায়িত্ব পালনে অযোগ্য প্রমাণিত হলে মাজলিসে শু’রা উক্ত পরিষদ বাতিল করতঃ নতুন পরিষদ গঠন করার অধিকার রাখবে।
৮. মাজলিসে শু’রার অধিবেশনঃ
(ক) স্বাভাবিক অবস্থায় বাৎসরিক একবার শু’রার অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বিশেষ প্রয়োজনে ও জরুরী ক্ষেত্রে অধিবেশন যে কোন সময় আহবান করা যাবে। মাদরাসার মুহতামিম (মাজলিসে শু’রার সহ-সভাপতি) অীধবেশনের আহবায়ক হবেন।
(খ) সাধারণ অধিবেশনের নোটিশ ৭ দিন পূর্বে এবং জরুরী ক্ষেত্রে অধিবেশনের নোটিশ একদিন পূর্বে করতে হবে।
৯. আ-জীবন সদস্য পরিষদ বা উপদেষ্টা পরিষদ গঠনঃ
এলাকার দ্বীনদার দানশীল ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে কমপক্ষে ৩১৩ জন বিশিষ্ট আ-জীবন সদস্য পরিষদ গঠিত হবে। যার মধ্যে কমপক্ষে ১০ জন আলেমে হাক্কানী থাকবেন। উক্ত আলেমগণের মধ্যে মাদরাসার মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম ও নায়েমে তা’লীমাত পদাধিকার বলে সদস্য থাকবেন। কার্য নির্বাহী পরিষদের সভাপতি অথবা সহ সভাপতি পদাধিকার বলে উক্ত পরিষদের সভাপতি নিযুক্ত হবেন।
(ক) দায়িত্ব ও কর্তব্য: মাদরাসার সার্বিক উন্নয়নে সদা সচেষ্ট থাকা। বিশেষ করে বিভিন্ন মৌসুমে অর্থাৎ যাকাত-ফিতরা, কুরবানী ও ফসলের সময় মাদরাসার আমদানী বৃদ্ধির ফিকির করা, মাদরাসার সাময়িক প্রয়োজনে এককালীন অর্থায়নে সার্বিক সহযোগিতা করা এবং শিক্ষার সুযোগ সমপ্রসারণের চিন্তা ফিকির করা ও সে সম্পর্কে কারো কোন প্রস্তাব থাকলে তা বিবেচনা করা।
(খ) আ-জীবন সদস্য পরিষদের অধিবেশন: মাদরাসার উন্নয়নকল্পে প্রতিবছর অন্ততঃ একবার উক্ত পরিষদের অধিবেশন ডাকতে হবে। পরিষদের সভাপতি মুহতামিম সাহেবের সঙ্গে পরামশক্রমে অধিবেশন আহবান করবেন। অধিবেশন আহবানের নোটিশ ৭ দিন পূর্বে সদস্যদের নিকট পৌছাতে হবে। অধিবেশনে পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সাহেব সভাপতিত্ব করবেন। সভায় গত বছরে অডিট রিপোর্ট এবং চলতি বছরের বাজেট অনুমোদন করানো হবে। তাছাড়া মাদরাসার আর্থিক উন্নতিকল্পে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে।
১০. (ক) পরিচালনা পরিষদ গঠন:
(১) পরিচালনা পরিষদের গঠন মাজলিসে শুরার মনোনয়নে হবে।
(২) উক্ত পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা অনধিক ২১ (একুশ) জন অন্যূন্য ১১ এগার জন হবে। তবে কিছু সংখ্যক সম্মানিত সদস্য থাকতে পারে যা ৫ (পাঁচ) জনের বেশী হবে না এদেরকে বিশেষ প্রয়োজনের সময় ডাকা হবে।
(৩) উক্ত পরিষদে নিম্ন লিখিত পদ সমূহ থাকবে-
(ক) সভাপতি, (খ) সহ-সভাপতি, (গ) সম্পাদক, (ঘ) অর্থ সম্পাদক
(৪) মাদরাসার মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম, ও নায়েবে তালিমাত পদাধিকার বলে উক্ত পরিষদের সদস্য থাকবেন।
(খ) পরিচালনা পরিষদের সদস্য যোগ্যতা:
অত্র মাদরাসার মূলনীতি, উদ্দেশ্য ও আদর্শের সঙ্গে একমত পোষনকারী, মাদরাসার শুভাকাঙ্খী, বিদ্যানুরাগী, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অনুযায়ী হওয়া।
(গ) সদস্য পদ বাতিলের কারণ:
(১) পর পর তিন অধিবেশনে বিনা নোটিশে অনুপস্থিত থাকা।
(২) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের পরিপন্থী কোন আকীদা পোষণ করা, বা গোমরাহ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া।
(৩) অত্র মাদরাসার নীতি ও স্বার্থ পরিপন্থী কোন কাজে লিপ্ত হওয়া।
(৪) স্বেচ্ছায় অব্যাহতি গ্রহণ করা।
(৫) মৃত্যুবরণ করা।
(ঘ) শূন্য পদ পূরণ:
কোন কারণে যদি সদস্য পদ শূন্য হয় তাহলে পরিচালনা পরিষদ অধিবেশনে আলোচনার মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ করতে পারবে। অব্যম মজলিসে শুরা থেকে উক্ত সিদ্ধান্তের অনুমোদন নিতে হবে।
(ঙ) পরিচালনা পরিষদের দায়িত্ব ও ক্ষমতা:
(১) অত্র মাদরাসার মূলনীতি, আদর্শ ও উদ্দেশ্য সংরক্ষণ।
(২) মাদরাসার স্থাবর- অস্থাবর সকল সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করা এবং শিক্ষার সুযোগ সমপ্রসারণ করা। গৃহ নির্মাণ সহ ছাত্রদের থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা করা।
(৩) সর্বদা মাদরাসার তহবিলের দিকে লক্ষ্য রাখা এবং মাদরাসা অর্থ সংকটের সম্মুখিন হওয়ার পূর্বেই তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(৪) বাৎসরিক বাজেট প্রণযন করা এবং তা অনুমোদরে জন্য উপদেষ্টা পরিষদের নিকট পেশ করতঃ অনুমোদন করানো।
(৫) শিক্ষক ও কর্মচারীগণের নিয়মিত বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করা।
(৬) লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের ছাত্রদের খোরাকী ব্যবস্থা করা।
(চ) পরিচালনা পরিষদের অধিবেশন:
(১) সাধারণত দুই মাস অন্তর একটি অভিবেশন ডাকা। অবশ্য উক্ত পরিষদের অধিবেশনের বছরে কমপক্ষে তিনবার হওয়া জরুরী।
(২) সম্পাদক অথবা সভাপতি/ সহ সভাপতি কর্তৃক পরিষদের অধিবেশন ডাকার নোটিশ ৩ দিন পূর্বে অথবা জরুরী মিটিং এর ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টা পূর্বে নোটিশ দিকে হবে।
(৩) কোন কারণে তারা অনুপসি’ত থাকলে মাদরাসার মুহতামিম অধিবেশন ডাকতে পারবেন।
(৪) এই পরিষদের অধিবেশনের কোরাম ১/৩ দ্বারা পূর্ণ হবে। মূলতবী অধিবেশনের জন্য কোন কোরামোর প্রয়োজন হবে না।
১১. মাজলিসে ইলমী: গঠন ও এবং তার তায়িত্ব ও কর্তব্য:
(ক) মাদরাসার তা’লীম তারবিয়াতের উন্নয়নের লক্ষ্যে মুহতামিম, নায়েবে মুহতামিম, নায়েমে তালিমাত নাযেমে দারুল ইকামা ও প্রয়োজনে মুনাসেব মত অন্য যে কোন একজন শিক্ষকের সমন্বয়ে মাজলিসে ইলমা গঠন করা।
(খ) মুহতামিম উক্ত মাজলিসে সদর থাকবেন। তার অনুপসস্থিতিতে নায়েবে মুহতামিম/নাযেমে তালীমাত সদরের দায়িত্ব পালন করবেন।
(গ) মাজলিসে শু’রার পক্ষ হতে মজলিসে ইলমির নিম্ন বর্ণিত ইখতিয়ার থাকবে: মাদরাসার তালীম-তারাবিাত কিতাব, পরীক্ষা ও ছাত্রাবাসের শৃঙ্খলা রক্ষা করা। মাজলিসে ইলমী কেবলমাত্র মুহতামিমকে পরামর্শ দিবে। কিন্তু কোন বিষয়ে বাধ্য করতে পারবে না।
১২. মাজলিসে আসাতিযা গঠন ও তার দায়িত্ব:
(ক) মাদরাসার সর্ব বিষযের উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল উস্তাদ সমন্বয়ে একটি মজলিসে আসাতিজা গঠিত হবে।
(খ) মাদরাসার মুহতামিম উক্ত মজলিসের সদর বা সভাপতি থাকবেন। তার অবর্তমানে নায়েবে মুহতামিম/নাযেমে তালিমাত উক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
(গ) মাদারাসার স্বার্থে সকল পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত সমূহ বাস্তবায়নে উক্ত মাজলিস বদ্ধপরিকর থাকবে। মাজলিসে আসাতিযায় যে সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে সমস্ত উস্তাদ/ ছাত্র/ কর্মচারীতা মানতে বাধ্য থাকবে।
১৩. মুহতামিমের যোগ্যতা:
মাদরাসার বিভাগ সমূহ সুষ্ঠু ও সুচারুরুপে পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য একজন দ্বীনদার, পরহেজগার অভিজ্ঞ আলেম অত্র মাদরাসার মুহতামিম থাকবেন। এবং তাঁর নিম্ন বর্ণিত গুনাবলী থাকা জরুরী:
(ক) আলেমে বা-আমল ও দ্বীনি ইলম সম্পর্কে বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
(খ) সততা, ন্যায়পরায়নতা, তাকওয়া ইত্যাদি সম্পন্ন ও আমানত এবং দিয়ানতদারীর ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য।
(গ) মাদরাসার আদর্শ ও উদ্দেশ্যের প্রতি অটল বিশ্বাসী ও পরামর্শকামী।
(ঘ) মাদরাসার হিতাকাংখী, সৎ সাহসী ও পরিচালনা কাজে অভিজ্ঞ।
(ঙ) দূরদর্শী, উৎসাহী ও মাদরাসার বিভাগ সমূহ সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
১৪. মুহতামিমের দায়িত্ব:
(ক) মাদরাসার দলিল দস্তাবেজ, জরুরী কাগজ পত্র ও ফাইলসমূহ দফতরে ইহতিমামে সংরক্ষণ রাখা।
(খ) মজলিসে শুরা ও মজলিসে ইলমী ও পরিচালনা পরিষদ কর্তৃক গৃহীত প্রস্তাবলী বাস্তবায়িত করা।
(গ) যথা নিয়মে মাদরাসার অর্থের হিফাযত করা এবং আয় ব্যয়ের হিসাব রাখার ব্যবস্থা করা, সে জন্য হিসাব রক্ষকের ব্যবস্থা করা যার বেতন মাদরাসার বহন করবে।
(ঘ) সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন আয় ব্যয় ও ক্যাশ পরিদর্শন, তহবিল মিলানো এবং প্রতিমাসের শেষে একটি হিসাব প্রতিবেদন সম্পাদক/ সভাপতির নিকট পেশ করা।
(ঙ) নিয়মিত ব্যয়ের প্রাথমিক মঞ্জুরী দেয়া এবং মাসে অন্ততঃ একবার সম্পাদক/ সভাপতি হতে খরচের ভাউচারের চূড়ান্ত অনুমোদন নেয়া।
(চ) আর্থিক বৎসর সমাপ্তির পর মাদরাসার আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্থত করিয়ে মজলিসে শুরার মঞ্জুরকৃত চার্টার্ড একাউন্টেন্ট দ্বারা হিসাব অডিট করানোর জন্য সম্পাদককে বুঝিয়ে দেয়া।
(ছ) মাদরাসার প্রয়োজন সম্পর্কে সম্পাদক/ সভাপতি ও মজলিসে শুরার সভাপতিকে অবহিত করা এবং তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
(জ) ছাত্র ভর্তি ও সুশিক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এমনকি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে প্রয়োজন মনে করলে মাজলিসে ইলমী ও সম্পাদক বা সভাপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে উচ্ছৃঙ্খল বা চরিত্রহীন ছাত্রদের বহিষ্কার করা।
(ঝ) মুহতামিম অধীনস্ত উস্তাদগণের ও বেতনভোগী কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনের তদরাকীর যিস্মাদার থাকবেন। কোন উস্তাদ কর্তব্যে অবহেলা করলে অথবা তার চরিত্রে কোন ক্রটি দেখা দিলে বা যে কোন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে উঠলে তার সত্যতা যাচাই করা এবং সর্তক করা, প্রয়োজনে মাজলিসে ইলমীর সাথে পরামর্শক্রমে তাকে সাসপেন্ড করা। প্রয়োজন মনে করলে সেরূপ অভিযোগ মাজলিসে শু’রার নিকট পেশ করা। এবং বেতনভোগী কর্মচারীদের অভিযোগ সম্পাদকের নিকট পেশ করা।
(ঞ) মাদরাসার উস্তাদ, ছাত্র ও বেতনভোগী কর্মচারীদের ছুটি মঞ্জুর করা এবং এমদাদী খানার মঞ্জুরী প্রদান করা।
(ট) শিক্ষকগণের যোগ্যতা, সুষ্ঠু কার্যপরিচালনা ও কর্তব্য পালন ইত্যাদি সম্পর্কে প্রতি বছর রজব মাসে একটি পোগনীয় লিখিত রিপোর্ট তৈরী করে তা মাজলিসে শু’রার নিকট পেশ করা।
(ঠ) মাদরাসার বিশিষ্ট্য উস্তাদদের সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীন মাজলিসে ইলমী গঠন করা। তাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ছাত্রদের চরিত্র গঠনের দায়িত্ব নাযেমে দারুল ইকামার নিকট অর্পন করা। প্রত্যেক্ষ ও পরোক্ষভাবে তা পরীক্ষা করা এবং তদ্রুপ প্রয়োজন মনে করলে বোর্ডিংয়ের এন্তজামের জন্য একজন নাযেমে (মাতবাখ) বোর্ডিং নিযুক্ত করা। লাইব্রেরীর কিতাবাদি লেনদেনের জন্য একজন নাযেমে কুতুবখানা নিযুক্ত করা।
(ড) মাজলিসে ইলমীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে শিক্ষক বা কর্মচারীওেদর সাময়িক নিয়োগ, বরখাস্ত ও বেতন নির্ধারণের অধিকারী হবেন। পরবর্তীতে তা মাজলিসে শুরার নিকট পেশ করে অনুমোনদন করিয়ে নেয়া।
১৫. নাযেমে তা’লীমাতের যোগ্যতা:
(ক) নাযেমে তা’লীমাত একজন মুহাক্বিক আলেম হবেন যাতে করে যে কোন উস্তাদের ইলমী জটিলতা তিনি সমাধান করতে পারেন।
(খ) তিনি আমলের পাবন্দ এবং পূর্ন মুত্তাবে’ সুন্নাত হবেন।
(গ) তিনি পরিচালনার ব্যাপারে অভিজ্ঞ হবেন।
(ঘ) তিনি অধিকাংশ সময় মাদরাসায় অবস্থানকারী হবেন।
(ঙ) তিনি সকলের নজরে মর্যাদাবান ও সম্মানের পাত্র হবেন।
১৬. নাযেমে তা’লীমাতের দায়িত্বঃ
(ক) প্রতি শিক্ষা বছরের শুরুতে ক্লাস রুটিন তৈরি করা ও প্রত্যেক পরীক্ষার মাকাদীরে আসবাক নির্ধারণ করা এবং মুহতামিমের সম্মতি নিয়ে জারীর ব্যবস্থা করা।
(খ) পরীক্ষা সমুহের অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে সার্বিক দায়িত্ব পালন করা।
(গ) সবকের ব্যাপারে ছাত্রদের সুবিধা- অসুবিধা পর্যবেক্ষণ করা, ছাত্রদের থেকে রিপোর্ট সংগ্রহ করা, কোন উস্তাদের ব্যপারে অভিযোগ আসলে মুহতামিমকে অবহিত করা এবং তা নিরসনের ব্যবস্থা করা।
(ঘ) ক্লাস-হাজিরার ব্যবস্থা করা ও নেগরানী করা। অধিক গায়র হাজির ছাত্রদের ব্যপারে মুহতামিমের কাছে রিপোর্ট পেশ করা।
(ঙ) প্রয়োজনবোধে মাজলিসে ইলমীর সঙ্গে পরামর্শক্রমে অভিজ্ঞতার আলোকে শেষ বছরে নেসাবের পরিবর্তন করতঃ মাজলিসে শু’রার সমর্থনক্রমে তা বাস্তবায়ন করা।
(চ) দীর্ঘ ছুটিভোগী উস্তাদদের সবকের অস্থায়ী ব্যবস্থা করা।
(ছ) প্রত্যেক ক্লাস শুরু হওয়ার সময় মাদরাসায় উপসস্থিত থাকা এবং উস্তাদদের নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা এবং পড়ানোর পদ্ধতি ইত্যাদির তদারকী করা।
(জ) অনুমোদিত রুটিনে বিনা পরামর্শে কোন পরিবর্তন না করা।
(ঝ) প্রতি পরীক্ষার পর ফলাফল প্রকাশ, ছাত্রদের খানা জারী ও বন্ধের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা।
(ঞ) ভর্তি ফরমে ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রদের জামা’আত নির্ধারণ করা। প্রয়োজনে পরীক্ষার নাম্বার ভর্তি ফরমে লিখে দেয়া।
১৭. নাযেমে দারুল ইকামার যোগ্যতা:
(ক) একজন মুত্তাবে’ সুন্নাত ও সকলের নিকট শ্রদ্ধাভাজন আলেম হওয়া।
(খ) আমলী মশকের ব্যাপারে বিশেষ পারদর্শী হওয়া।
(গ) চৌকান্না ও সতর্ক দৃষ্টি সম্পন্ন এবং হুশিয়ার হওয়া।
(ঘ) ইসলাহ ও সংশোধনের জযবাওয়ালা হওয়া।
(ঙ) অধিকাংশ সময় মাদরাসায় অবস্থান করা।
১৮. নাযেমে দারুল ইক্বামার দায়িত্ব:
(ক) ছাত্রদের তরবিয়াতের পূর্ণ যিম্মাদার, মাঝে মাঝে মুরব্বী উস্তাদদের দ্বারা ছাত্রদের নসীহত করানো। কোন ছাত্রের কোন অভিযোগ আসলে সঙ্গে সঙ্গে মুহতামিম সাহেবকে অবগত করানো এবং তারই নিদের্শে অভিযোগের সত্যতা যাচাই পূর্বক বিচারের ব্যবস্থা করা।
(খ) নেগরানদের নেগরানী করা অর্থাৎ নেগরানরা দারুল ইকামার কানূন সঠিকভাবে জারী করেছেন কিনা তার দেখাশুনা করা।
(গ) সকল জামাতের ছাত্রদের মধ্যে এক একজন জিম্মাদার নিয়োগ করা এবং ঐ সমস্ত জিম্মাদারদের নিয়ে মাসে কমপক্ষে একটি বৈঠক করা ও সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের তথ্য সংগ্রহ করা।
(ঘ) নেগরান উস্তাদদের সহযোগিতায় ছাত্রদের সকল বিষয়ে তল্লাশি ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা।
(ঙ) ছাত্রদের এত্তেবায়ে সুন্নাতের বিষয়াদির উপর সর্বদা সতর্ক দৃষ্টি রাখা। বিশেষ করে জামাআত সহ নামায আদায়ের ব্যাপারে খুব বেশী খেয়াল রাখা এবং প্রত্যেক ছাত্র যাতে করে উজু, এস্তেঞ্জা, আযান, ইক্বামাত, নামাজ খানাপিনা, ঘুম ইত্যাদিসহ যাবতীয় কাজ আমলী মশকের মাধ্যমে শিক্ষালাভ করে সেই অনুযায়ী আমল করতে পারে তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
(চ) ছাত্রদের লেবাস-পোষাক, কামরা, দরসগাহ সহ মাদরাসা ঘরের আশ-পাশের সাফাইয়ের ব্যবস্থা করা। সেজন্য এক বা একাধিক নাযেমে সাফাই নিযুক্ত করা।
(ছ) ছাত্রদেরকে মাদরাসার ভিতরে বা বাইরে কোন কাজে লাগাতে হলে তার ইন্তেজাম করা এবং বিশেষ করে বাইরে ছাত্র পাঠাতে হলে মুহতামিমের সঙ্গে পরামর্শ করা বাঞ্জনীয়।
(জ) নাযেমে দারুল ইকামা মুহতামিমের সঙ্গে পরামর্শ ক্রমে প্রত্যেক নেগরানকে তার অধীনস্ত ছাত্রদের লেখা, পড়া, আচার-আচারণসহ মানসিক ও চারিত্রিক গুণাগুন সম্বলিত রিপোর্ট পেশ করার জন্য কিছু ধারা বাতলে দিবেন এবং প্রতি পরীক্ষার পর নেগরানদের থেকে রিপোর্ট উসুল করতঃ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
১৯. অভ্যন্তরীন ক্যাশিয়ারদের দায়িত্ব:
হিসাব রক্ষক খরচের লিখিত অনুমোদন মুহতামিম থেকে নিবেন। তবে মুহতামিমের অনুপসি’তের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন দেখা দিলে নাযেবে মুহতামিম থেকে তার অনুমতি নিবেন। সটিক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মাদারাসায় সর্বদা ক্যাশিয়ার ও হিসাব রক্ষক ভিন্ন দুইজন হবে। কোন ক্রমেই একই ব্যক্তি ক্যাশিয়ার ও হিসাব রক্ষক হতে পারবে না। অভ্যন্তরীন ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব রশিদ লেনদেন করা, রশিদ সংক্রান্ত খাতা/ রেজিষ্ট্রিসমূহ সংরক্ষণ করা ও পূর্ণ করা রশিদের কালেকশনকৃত টাকা জমা নেয়া এবং অতিরিক্ত টাকা ব্যাংকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা। মুহতামিম কর্তৃক অনুমোদিত ও হিসাব রক্ষক কর্তৃক দস্তখতকৃত ভাউচারের টাকা পরিশোধ করা। পরবর্তীতে পাকা খাতায় লিপিবদ্ধ করার জন্য জমার রশিদ ও খরচের ভাউচার হিসাব রক্ষককে বুঝিয়ে দেয়া। আয়-ব্যয় নিজস্ব জার্নালে লিখে রাখা।
২০. হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব:
(ক) হিসাব রক্ষক প্রতিদিন রশিদ ও ভাউচার জমা খরচের হিসাব খাতওয়ারী ক্যাশ বইতে উঠাবেন এবং লেজার মেন্টন করবেন। মুহমামিমের অনুমোদন ব্যতীত কোন ভাউচার তিনি গ্রহণ করবেন না এবং প্রতি মাসের শেষে আয়-ব্যয়ের দুটি প্রতিবেদন কতৃপক্ষের নিকট পেশ করবেন। যার একটি চলতি মাসের হিসাব, অপরটি পেছনের মাস সমূহ সহ চলতি মাস পর্যন্ত হিসাব তাছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় এবং শেষ বছরে হিসাব প্রতিবেদন পেশ করবেন।
(খ) সাধারণ বা অর্থ সম্পাদক প্রতি সপ্তাহে বা মাস শেষে সকল ভাউচার চেক করে তা চূড়ান্ত অনুমোদন দিবেন। সাধারণ সম্পাদক বা অর্থ সম্পাদক এ দায়িত্ব পালনে বিলম্ব করলে মুহতামিম সাহেব সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
২১. নাযেমে কুতুবখানার দায়িত্বঃ
মাদরাসার কুতুবখানার লেনদেনের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন। এবং মাদরাসার কিতাব পত্র সংরক্ষণের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবেন।
২২. অফিস ষ্টাফদের ছুটির কানুন:
(ক) হিসাব রক্ষক, কালেক্টর বোর্ডিং স্টাফগণ পার্মানেন্ট হওয়ার পর প্রতি মাসে দু’দিন ছুটি পাবেন এর বেশী ছুটি নিলে তার বেতন কাটা যাবে এবং রমযান মাসে তাদের ছুটি থাকবে না। অবশ্য দুই ঈদ এবং বৎসরের মাঝের দুই বন্ধে মুহতামিমের অনুমতিক্রমে তারা ছুটি ভোগ করতে পারবেন। মাদরাসার কাজের খাতিরে যদি ২/১ দিন দেরী করে যেতে হয় বা মাদরাসার খোলার ২/১ দিন আগে মাদরাসা পৌছাতে হয় বা থাকতে হয় তাহলে তা তারা অবশ্যই করবেন।
(খ) অফিসে একটি অভিযোগ বই থাকবে। কারো কোন অভিযোগ থাকলে তার মধ্যে লিপিবদ্ধ করে স্বাক্ষর করবেন এবং তা মুহতামিমের কাছে পেশ করা হবে।
(গ) মাদরাসা ছুটিকালীন সময় যাদেরকে জিম্মাদারী দিয়ে রাখা হবে তারা স্বীয় বেতন ভাতা অনুযায়ী ছুটির দিনগুলোতেও ভাতা পাবেন বা ঐ পরিমাণ ছুটি নিতে পারবেন।
২৩. উস্তাদদের কানূন সমূহ:
(১) সুশিক্ষা দান। সুষ্ঠু নৈতিক চরিত্র গঠন মাদরাসার আসল উদ্দেশ্য। এ জন্য শ্রদ্ধেয় উস্তাদসাহেবানদের মহান ও পবিত্র দায়িত্ব এই যে, তারা সবগুলো সবক মুতালা’আ করে উত্তমরুপে বুঝিয়ে ছাত্রদেরকে প্রশ্ন করে বুঝতে সুযোগ দিবেন এবং তাদেরকে জ্ঞানের দিক দিয়ে ও চরিত্র গঠনের দিক দিয়ে ধাপে ধাপে ক্রমোন্নতির পথে ধাবিত করবেন।
(২) উস্তাদ সাহেবানদের কর্তব্য পরায়নতা ও সময়ানুবর্তিতা ছাত্রদের জ্ঞান সমৃদ্ধি ও চারিত্রিক উন্নতির চাবিকাঠি। সুতরাং উস্তাদদের কর্তব্যপরায়নতা ও সময়ানুবর্তিতায় আদর্শবান হওয়া জরুরী।
(৩) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রত্যেক কিতাবের নেসাব সমাপ্ত করা। যদি কোন ছাত্র তার পাঠ্যভূক্ত কিতাবসমূহ বা বিশেষ কোন কিতাব পড়ার উপযুক্ত না হয়; তার সম্পর্কে নাযেমে তা’লীমাতকে সরাসরি অবগত করানো। প্রত্যেক জামাআতের বিভিন্ন ছাত্র দ্বারা সবকের ইবারত পড়ানো। সবক জিজ্ঞাসা করা ও মুতালা’আ করছে কিনা জিজ্ঞাসা করা। যাতে ছাত্ররা উত্তমরুপে সবক ইয়াদ, মুতালা’আ ও তাকরার করতে অভ্যস্ত হয়।
(৪) প্রতিদিনের পিছনের সবক জিজ্ঞাসা করা, নতুন সবক দরসের মধ্যে ইয়াদ করানোর চেষ্টা করা, মাসিক ও সাপ্তাহিক পরীক্ষা গ্রহণ করে ছাত্রদের যোগ্যতা বৃদ্ধি করা।
(৫) ছাত্রদের নৈদিন সবক স্বাভাবিক নিয়মে পড়ানো, যাতে এ অবস্থার সৃষ্টি না হয় যে বছরের প্রথমে সামান্য পড়িয়ে বছরের শেসে এত বেশী পরিমান পড়ানো যা ছাত্ররা আয়ত্বে আনতে পারে না।
(৬) প্রত্যেক ঘন্টায় ছাত্র হাজিরা খাতায় ছাত্র হাজিরা গ্রহন করা।
(৭) আসাতিযায়ে কেরাম ছাত্রদের জন্য সর্বদিক দিয়ে আদর্শ হওয়া এবং যাতে বিরূপ সমালোচনার পাত্র না হতে হয় সেদিকে সর্বদা খেয়াল রাখা।
(৮) সকল ছাত্রের সঙ্গে সমানভাবে স্নেহ ও সদয় ব্যবহার করা, যাতে ছাত্রদের মধ্যে কোনরূপ পার্টিবন্দি না হতে পারে। সৎ চরিত্রবান ছাত্রদেরকে স্নেহ ও দুষ্টু ছাত্রদেরকে তামবীহ তাকীদের মাধ্যমে তারবিয়াত করা কিন্তু বিশেষ সতর্কতার অবলম্বন করা যাতে কাউকেই বেশী স্নেহ করার কারণে অন্যরা ধারণা করতে না পারে।
(৯) প্রত্যেক উস্তাদ তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সমূহ নিষ্টার সঙ্গে সম্পন্ন করবে। যার উপর তার বার্ষিক তারাক্কী নির্ভর করে।
(১০) শৃংখলা বজায় রাখার জন্য সকল উস্তাদ মুহতামিম ও নাযেমে তা’লীমাতের অনুগত থাকবেন।
(১১) প্রত্যেক উস্তাদ শিক্ষক হাজিরা বহিতে দৈনিক সঠিক উপসি’তি সূচক স্বাক্ষর অবশ্যই করবেন। এ স্বাক্ষর প্রত্যহ সকাল ৯টা থেকে যোহরের পর ঘন্টা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত করতে পারবেন নতুবা ঐদিন উপস্থিত হিসাবে গণ্য হবে না।
(১২) কোন কারণে ব্যক্তিগত ভাবে কোন উস্তাদ ছুটি নিতে চাইলে জামাআত খানায় কমপক্ষে ১ম দুই ঘন্টা করার পর এবং হিফয, মক্তব ও নাযেরা বিভাগে সকাল ১০টায় শিক্ষক হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর দিয়ে চলে যেতে পারবেন এবং ছুটি ভোগ করার পর জামাআত খানায় সকাল ১০টায় এবং হিফজ মক্তব ও নাযেরা বিভাগের উস্তাদ ফজর বাদ উপস্থিত থাকলে ঐদিন উপস্থিত বলে গন্য হবেন।
(১৩) প্রত্যেক উস্তাদ অনিবার্য কারণে ৬ ঘন্টার কম অনুপস্থিত ছাত্রদের ক্ষমা করতে ও সাধারণ শাস্তি দিতে পারবেন। অনুপস্থিতিতে অভ্যস্ত ছাত্রদের সম্পর্কে নাযেমে তা’লীমাতকে অবগত করাবেন।
(১৪) প্রত্যেক উস্তাদ মাজলিসে শু’রা মাজলিসে ইলমী ও মাজলিসে আসাতিযার সিদ্ধাস্তসমূহ পালন করতে বাধ্য থাকবেন।
(১৫) কোন কারণ বশতঃ স্বেচ্ছায় বিদায় গ্রহণ করতে চাইলে তিন মাস পূর্বে মুহতামিম সাহেবকে মৌখিক অবগতি এবং একমাস পূর্বে লিখিত ইস্তেফাপত্র দিতে হবে নতুনা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
(১৬) মাদরসার উদ্দেশ্য, আদর্শ ও স্বার্থ পরিপস্থী কাজে অংশগ্রহণ বা পরামর্শদান নিয়োগ বাতিলের কারণ হবে।
(১৭) প্রত্যেক উস্তাদের উপর সাধারণভাবে নিজ ক্লাসের ছাত্রদের শিক্ষাগত ও চারিত্রগত উন্নতির দায়িত্বভার অর্পিত। সুতরাং ছাত্রদের সাধারণ অপরাধে যথোপযোগী তাসহীহ করা বা সাধারণ শাস্তি দিয়ে তার সংশোধন করা ব্যতীত অন্য কারোর কঠোর শাস্তি দেয়ার অধিকার থাকবে না।
(১৮) তা’লীমি ও তারাবিয়তী মজলিসে সকল উস্তাদ উপসি’ত থাকা জরুরী।
(১৯) কোন ছাত্র থেকে যদি কোন বে-আদবী প্রকাশ পায় তাহলে মুআমালা পরিস্কার না করা র্যন্ত কোন শিক্ষা তাকে প্রশ্রয় দিবেন না।
(২০) উস্তাদ দরসে দুর্বল ছাত্রদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দসর দিবেন।
(২১) সাপ্তাহিক মাজলিসে আসাতিযার মিটিংয়ে কোন উস্তাদদের কোন আলোচ্য বিষয় থাকলে মিটিং শুরু হওয়ার আগেই তা লিখিত ভাবে মুহতামিমের কাছে জমা দিবে।
(২২) কোন উস্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে মাজলিসে আসাতিয়ায় আলোচনা না করে মুহতামিত সাহেবকে সরাসরি বা লিখিতভাবে অবগত করাবেন। মুহতামমিস সাহেব মুনাসিব যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তা মেনে চলা প্রত্যেক উস্তাদদের জন্য জরুরী।
(২৩) নাহবেমীর থেকে নিচের জামাতের উস্তাদহণ প্রত্যেক কিতাবের সাপ্তাহিক কোচিং ও পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন।
(২৪) (ক) সপ্তাহের কার্য দিবসে উস্তাদ ও স্টাফগণের মাদরাসায় থেকে আপন আপন দায়িত্ব পালন করবেন এবং সোমবার বা সাপ্তাহিক মাজলিসে আসাতিযায় উপসি’ত থাকা একান্ত জরুরী।
(খ) অল্প সময়ের জন্য একান্ত জরুরতে মুহতামিম সাহেব থেকে মৌখিক ছুটি নিযে বাইরে যেতে পারবেন।
(গ) উস্তাদ ও স্টাফগণ শুক্রবারে মুহতামিম সাহেব থেকে অনুমতি নিয়ে বাইরে যেতে পারবেন তাবে কতক্ষনের জন্য যাবেন তা নির্ধারিত রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে এবং তার অধীনস্থ ছাত্রদেরকে নেগরানী করবেন এমন ব্যবস্থাও করে যেতে হবে।
(২৫) আসাতিযায়ে কিরাম নিজেদের ফুরসত অনুযায়ী ছাত্রদেরকে কিতাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যদিও ঐ বিতাবাদির সবক তার জিম্মায় না থাকে।
(২৬) নেসাবের ব্যাপারে উস্তাদগন সর্তকর্তা অবলম্বন করবেন এবং পূর্ব থেকেই এক নিয়মে পড়াতে চেস্টা করবেন।
(২৭) বর্তমানে ছাত্ররা তরজমা ইমলাতে খুব দুর্বল সুতরাং উস্তাগণ বিশেষ করে যারা আদবের কিতাব পড়ান বিষয়দ্বয়ের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখবেন।
(২৮) কাফিয়া পযৃন্ত নীচের কিতাবের উস্তাতগণ দরসে সবক উসূল করার ব্যাপারে খুবই তাকীদ রাখবেন। পেছনের সবক না শুনে সমানের সবক দিবেন না। যে সকল ছাত্রগণ দরসে ঠিকমত ছবক শুনাতে পারে না এবং চেষ্টাও করে না এ ধরনের বালেগ ছাত্রদের দৈহিক শাস্তি প্রয়োগ করবেন। এভাবে চেষ্টা চালানোর পর আশানুরূপ ফল না পেলে তাদের সম্পর্ক তালীমাতকে রিপোর্ট দিয়ে দিবেন।
(২৯) উস্তাদগণ দরসের ইহতিমাম করবেন। প্রয়োজনে সুযোগ থাকলে ঘন্টার আগে যাবেন কিন্তু পরবর্তী ঘন্টা পড়ার আগে দরস বন্ধ করবেন না।
২৪. ছাত্রদের কানূন সমূহ:
(১) কোন ছাত্র কোন প্রকার সংগঠনে যোগ দিতে পারবে না। কারো ব্যাপারে উক্ত অভিযোগ প্রমানিথ হলে সে ছাত্র মাদরাসার কানূন ভঙ্গকারী হয়ে বহিষ্কারের উপযুক্ত বলে গণ্য হবে। কেননা এটা মাদরাসার ইলমী ও আমলী পরিবেশের জন্য হুমকি সরূপ। সুতরাং এ ব্যাপারে শিথীলতার কোন অবকাশ নেই।
(২) সবকের সমায়ানুবর্তিতা প্রত্যেক ছাত্রের জন্য আবশ্যক পালনীয় হবে। এবং অবসর সময়ে মাদরাসা সীমানার মধ্যে থেকে তাকরার, মুতালা’আয় মশগুল থাকবে।
(৩) মাদরাসার সীমানার মধ্যে থেকে শরীর চর্চা ছাড়া বিকেলে ছাত্রদের বাইরে ঘোরাফেরা করা নিষেধ। কেননা এটা ইলমী একাগ্রতা বিনষ্ট করে। জরুরী কোন বিষয়ে নেগরানের অনুমতিক্রমে বাইরে যেতে পারবে।
(৪) ছুটির পর মাদরাসা খোলার দিনেই যথারীতি সুচারুরুপে সবক চলবে। সুতরাং মাদরাসা খোলার আগের দিন বিকেলে সকল ছাত্র উপসস্থিত হওয়া জরুরী।
(৫) নেগরান উস্তাদের সুফারিশক্রমে ছুটি মঞ্জুর করানো ব্যতীত এক পিরিয়ড এর অনুপসি’তির জন্য একখানা অনুরূপ পাঁচ পিরিয়ডের জন্য ৫ খানা বন্ধ হয়ে যাবে এবং ন্যায় সংগত কারণ ছাড়া ও ৬ পিরিয়াড অনুপস্থিত থাকলে হাজিরা খাতা হতে এবং বিনা ওজরে একাধিক দিন অনুপস্থিত থাকলে ভর্তি খাতা থেকে তার নাম কেটে যাবে। তখন দরখাস্তের মাধ্যমে একদিনের জন্য ৫০ টাকা নিয়ে হাজিরা খাতায় এবং একাধিক দিনের জন্য অর্ধেক ভর্তি ফি দিয়ে ভর্তি হওয়ার জরুরী। নতুবা সবকে বসতে পারবে না।
(৬) কোন ছাত্রের নিজস্ব ইলেকট্রিক বালব থাকবে না। রাত ১০.৩০ মিঃ এর পর কোন ছাত্র পড়তে পারবে না। ছাত্ররা রাত ১০ টায় ঘুমাবে এবং ভোরে আযানের কিছুক্ষন পূর্বে ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস করবে।
(৭) কোন ছাত্র টিউশনী করতে পারবে না।
(৮) বন্ধের মধ্যে কোন ছাত্রকে রুম খোলার চাবি দেয়া হবে না। যদি একান্ত প্রয়োজনে খুলতে হয় তাহলে যে উস্তাদ মাদরাসায় থাকবেন তার মাধ্যমে রুম খুলতে হবে।
(৯) রুমে লাইট ও দরওয়াজা রাত্রে নির্দিষ্ট সময় বন্ধ হয়ে যাবে। এর পরে কোন ছাত্র বাইরে খাততে পারবে না। এবং লাইটও জ্বালাতে পারবে না।
(১০) ইলমী ও আমলী উভয় প্রকার তারাক্কী সমানভাবে মৌলিক উদ্দেশ্যবালীর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং নিজ চাল চলন পোষাক পরিচ্ছেদ প্রভৃতি বিষয়ে সুন্নত তরীকার অনুসরণ করবে। এবং চুল ১ ইঞ্চি হওয়ার পরক্ষনেই কেটে ফেলা ও হলক করা জরুরী। ১৫ বৎসরের কম বয়সী ছাত্রদের প্রতিমাসে একবার তলক করা জরুরী।
(১১) মাদরাসা ও মাদসারার আঙ্গিনা ছাত্ররা পরিস্কার রাখবে। কমপক্ষে সপ্তাহে একবার কামরা পরিস্কার করা জরুরী।
(১২) জামাআতে মিযান পর্যন্ত কিরাআত ও তাজবীদ অবশ্যই শিক্ষণীয় বিষয় থাকবে।
(১৩) প্রত্যেক ছাত্রকে মাতৃভাষায় সপ্তাহে একদিন ওয়াজ নসীহত শিক্ষা জরুরী। সেদিন অর্ধ দিবস দরস চলবে।
(১৪) পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সময় জামাতের ১০ মিনিট পূর্বে কামরা ত্যাগহ করা জরুরী। কিন্তু জুমুআর নামাজের জন্য আযানের ১৫ মিনিট পূর্বে কামরা ত্যাগ করতে হবে। সাথে সাথে জিম্মাদারগন কামরা সমূহ বন্ধ করে দিবেন।
(১৫) ভর্তি ফরমে বর্ণিত সকল কানূন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভর্তি হতে হবে।
২৫. ভর্তি ইচ্ছুক ছাত্রদের অঙ্গিকারনামা:
আমি অত্র জামিয়ায় ভর্তি হতে ইচ্ছুক। এতদার্থে আমি মনে প্রাণে অঙ্গিকার করছি যে,
(১) মাদরাসার বর্তমানে ভবিষ্যতে গৃহীতব্য সকল আইন কানূন অক্ষরে মেনে চলতে সচেষ্ট থাকব।
(২) দরস মুতালাআ ও তাকরারের যথাযথ পাবন্দী করব। পড়াশুনা ব্যতীত কোন শোগল ইখতিয়ার করব না। পত্রিকা ম্যাগাজিন, গল্প, উপন্যাসের বই, পুথি পুস্তক এবং ফাসিদ আকীদা ও ফাসিদ চিন্তা ধারার লোকদের কোন বই পত্র পড়ব না।
(৩) সর্বদা সুন্নত তরীকা মোতাবেক আদশ জীবন যাপন করব। সুন্নাত পোষাক পরিচ্ছদ চালন চলন ও আচার আচার ব্যবহার গ্রহণ করব। এ ব্যাপারে আমাদের আকাবিরদের তরয ত্বরীকাকেই নমূনা হিসাবে গ্রহণ করব।
(৪) পাঞ্জাবী হাটুর নিচ পর্যন্ত এবং সেলোয়ার লুঙ্গি পায়ের টাখনুর উপর পর্যন্ত পরিধাণ করব। সর্বদা পাঁচ কল্লি টুপি ব্যবহার করব।
(৫) সবর্দা নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকব এবং আশ পাশ পরিচ্ছনান রাখব। মাথার চুল ও হাত পায়ের নখ ছোট এবং মোচ খাট করে রাখব। দাড়ি কখনও উপড়াব না এবং এক মুষ্টির ভিতরে ছাটব না বা কাটব না।
(৬) সংশ্লিষ্ট নেগরানের অনুমতি ব্যতিরেকে কখনও মাদরাসা চত্বরের বাইরে যাব না। সর্বদা মাদরাসার মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামায তাকবীরে উলার সঙ্গে আদায় করতে সচেষ্ট থাকব।
(৭) মাদরাসায় শিক্ষাকালে কোন রাজনৈতিক দল বা ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কোন ভাবে জড়িত হব না। মাদরাসার অভ্যস্তরে কোন প্রকার দলাদলি করবো না।
(৮) আমি আত্ন প্রত্যয় করছি যে, দরসে নেযামী মাদরাসায় পড়া অবস্থায় আলিয়া মাদরাসার কোন পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করিনি, ভবিষ্যতেও ইরাদা রাখি না।
(৯) মাদরাসার সাফল্য উন্নতি ও সুনাম সুখ্যাতি রক্ষা ও বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকবে। মাদরাসার কল্যাণে কখনও কোন খিদমতের প্রয়োজন দেখা দিলা তা সানন্দে আঞ্জাম দিব।
(১০) মাদরাসার উস্তাদগণের যথাযথ ইহতিরাম ও খিদমতকে নিজের জন্য সৌভাগ্যের উসীলা মনে করব এবং তাদের অনুসরণ-অনুকরণ নিজের ফরীযা বলে জানব। মাদরাসার খাদিম-কর্মচারীবৃন্দের প্রতি সম্ভাব্য প্রদর্শন করব। মাদরাসার সকল ছাত্রের সঙ্গে ভাই ভাই সুলভ ভদ্র আচরণ করব। কারো সঙ্গে বেশী দোস্তীও করিব না এবং দুশমনীও রাখব না। কারোর সঙ্গে কোন অবস্থাতেই ঝগড়া ফাসাদ করব না।
(১১) মাদরাসার আসাবাবপত্রের যথাযথ হিফাজত কবর। মাদরাসার কোন সম্পদ নষ্ট হতে দেব না। বা নিজে মাদরাসার কোন জিনিসের ক্ষতি সাধন করব না। মাদরাসার পানি, বাতি পাখা ইত্যাদির খরচে মিতব্যয়ী হব এবং অপচয় সম্পর্কে সর্তক থাকব। মাদরাসার পক্ষ হতে যে খানা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয় তা-ই গণীমাত মনে করব। কখনও কোনরূপ অভিযোগ করব না।
২৬. ভর্তিরকানূন সমূহ:
১। উপরের জামাআতের ভর্তির জন্য বার্ষিক পরীক্ষায় মৌকুফ আলাইহি কিতাবে ভাল নাম্বার ও পাশ করার জরুরী। যদি মৌকুফ আলাইহি বিষয় ব্যতিত অন্য কোন কিতাবে ফেল থাকে, তাহলে তাকে তারাক্কী দেয়া যেতে পারে। আর যদি মৌকুফ আলাইহি কিতাবে কম নাম্বার বা ফেল থাকে এবং সে যদি মেহনতী ও মুআদ্দার হয় তাহলে ভর্তি ফি দিয়ে সামে’ হিসাবে থাকতে পারে। পরবর্তী কোন পরীক্ষায় কামিয়াব হলে তাকে ভর্তি করা যাবে। নতুবা সে ঐ বছর সামে’ হিসাবে থাকবে।
২। দাখিলা পরীক্ষা মীযান জামাআতের উপরের সকল জামাআতে লিখিত হবে। নাহবেমীরের নিচের দুই জামাআতের ভর্তি পরীক্ষা মৌখিক হবে এবং পরীক্ষক নির্ধারণ করা হবে।
৩। মাদরাসার সালানা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই মাদরাসার পুরাতন ছাত্রদের ভর্তি শুরু হবে তবে। তবে বেফাকের পরীক্ষার্থীগণ বেফাকের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর ভর্তি হতে পারবে।
৪। ১০ শাওয়াল মাদরাসা খোলার পর ৫ দিনের মধ্যে নতুন/পুরাতন ছাত্রদের ভর্তি হতে হবে। বিশেষ অসুবিধার কারণে পুরাতন ছাত্ররা খবর পাঠিয়ে দেরী করে আসলে তাকে ভর্তি করা যাবে।
৫। তাকমীলে ভর্তির নাম্বার ৫০%।
জালালাইন, মিশকাতে ভর্তির নাম্বার ৫৫%
কাফিয়া, শরহেজামী, শরহেবেকায়ায় ভর্তির নাম্বার ৬০%
বাকী নীচের জামাতগুলিতে ভর্তি নাম্বার ৬৫% রাখতে হবে।
৬। বার্ষিক পরীক্ষা না দেয়া ছাত্রদের ব্যাপার নাযেমে তা’লীমাত যাচাই করবেন। যদি সহীহ ওজর থাকে, তাহলে নতুন দাখেলা পরীক্ষার নাম্বার অনুযায়ী ভর্তি হতে পারবে।
৭। বিগত বছরের পুরাতন ছাত্রদের মধ্যে যাদের রিপোর্ট খারাপ তাদের ভর্তির অনুমতি দেয়া হবে না। অথবা বিবেচনা সাপেক্ষে ভর্তির অনুমতি দেয়া যাবে।
২৬. দাখিলা ইমতিহানের কিতাব সমূহ তালিকা:
১। তাকমীল : মিশকাতুল মাসাবীহ (মুকাম্মাল) ও হিদায়া রাবে।
২। নিহায়ী সানী : জালালাইন শরীফ (মুকাম্মাল) ও হিদায়া আউয়ালাইন
৩। নিহায়ী আউয়াল : শরহেবেকায়া ও নূরুল আনওয়ার কিয়াস পর্যন্ত
৪। সানাভী ছানী : শরহেবেকায়া ও নূরুল আনওয়ার কিয়াস পর্যন্ত
৫। সানাভী আউয়াল : কাফিয়া ও কুদূরী
৬। উস্তানী সালেস : হেদায়াতুন্নাহব ও ইলমুস্ সীগাহ
৭। উস্তানী সানী : নাহবেমীর ও ইলমুছ ছীগাহ
৮। উস্তানী আউয়াল : ইলমুছ ছরফ ১ম-২য় খন্ড ও আরবী আদব, ইমলা
৯। ইবতিদায়ী সানী : তাইছীরুল মুবতমাদী ও ফার্সী পহেলী, ইমলা।
১০। ইবদিদায়ী আউয়াল : উর্দূ কায়দা ও ইমলা।
২৭. ছাত্রাবাসের কানুন সমূহ:
১। ১০ বছরের নিম্ন বয়স্ক কোন চাত্র ছাত্রাবাসের অবস্থান করতে পারবে না।
২। ছাত্রগণ সবকের সময় ছাড়া মাগরিবের পর রাত ১০টা পর্যন্ত এবং ফজরের পর হতে সবক শুরু হওয়া পর্যন্ত তাকরার মুতালাআ ও সবক ইয়াদের কাজে মশশুল থাকবে। অন্যের কোনরূপ ক্ষতি না হয় এ দিকে বিশেষ ভাবে লক্ষ্য রাখবে।
৩। বাদ ফজর ও বাদ আসল তারবিয়াতী মাজলিসে ও সাপ্তাহিক গাশতে শরীক থাকা সকল ছাত্রের জন্য অপরিহার্য।
৪। হাফেজ ছাত্রদের দৈনিক তিন পারা ও গায়রে হাফেজদের জন্য আধাপারা কুরআনে কারীম তিলাওয়াত, ফজর বাদ সূরা ইয়াসীন, মাগরিব বাদ সূরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত একান্ত জরুরী। সাথে সাথে মাসনূন দুআরও ইহতিমাম করতে হবে।
৫। কোন ছাত্র বহিরাগত লোক বা স্বীয় আত্নীয়-স্বজনকে মুহতামিকের অনুমতি ছাড়া মাদরাসারর ভিতরে আনতে পারবে না।
৬। নেগরানের অনুমতি ব্যতীত কারো সঙ্গে কোন প্রকার লেনদেন করতে পারবে না। কোন ছাত্র পরস্পর গভীর সম্পর্ক রাখতে পারবে না। আপোষ গালিগালাজ, ঝগড়া-ফাসাত ইত্যাদিতে লিপ্ত হবে না। আপোষে মতানৈক্য দেখা দিলে নেগরান দ্বারা ফায়সালা করবে, কোন অবসাতেই নিজে প্রতিশোধ নিবে না। কারো জিনিস অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করবে না বা ধরবে না।
৭। প্রত্যেক ছাত্রের সিট নাযেমে দারুল ইকামা কর্তৃক নির্ধারিথ হবে। কোন ছাত্র নিজে সিট গ্রহণ ও পরিবর্তন করতে পারবে না।
৮। কোন ছাত্র নাযেমে ইকামারা অনুমতি ছাড়া ছাত্রাবাস ছেড়ে অন্যত্র রাত্র যাপন করতে পারবে না।
৯। কোন রাজনৈতিক দলের বা ছাত্র সংগঠনের কাগজ-পত্র, আলিয়া মাদরাসার বই-পত্র, সিনেমার বই, ম্যাগাজিন, পত্রিকা, নভেল-নাটক, জানদারের ছবি ইত্যাদি রাখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১০। এক কামরায় ছাত্র সংশ্লিষ্ট নেগরানের অনুমতি ব্যতীত অন্য কামরায় অবস্থান করতে পারবে না। সকলে নিজ নিজ সিটে থেকে পড়াশুনায় লিপ্ত থাকবে।
১১। সকল ছাত্রের সর্বক্ষণ ছাত্রাবাসে হাজির থাকা জরুরী। ছাত্রাবাসের হাজিরায় কারোর অনুর্ধ তিনবার অনুপস্থিতি পাওয়া গেলে তার সিট কেটে দেয়া হবে।
১২। উজু-ইস্তেঞ্জা, নামাজ কালাম, খানা-পিনা, সালাম-কালাম, ঘুম ইত্যাদি সকল কাজ সুন্নাত তরীকায় সম্পন্ন করবে। পস্পর সালামের বিশেষ পা-বন্দী করবে।
১৩। ছাত্রগণ দারুল ইকামার সংশ্লিষ্ট নেগরান থেকে সুপারিশ নিয়ে, উক্ত নেগরান না থাকলে পার্শ্ববর্তী নেগরান থেকে সুপারিশ নিয়ে মুহতামিম থেকে ছুটি মঞ্জুর করাবে।
১৪। ছুটির দরখাস্ত মঞ্জুর করিয়ে দফতরে তা’লীমাতে জমা দিয়ে বোর্ডিংয়ে খানা বন্ধ করিয়ে যেতে হবে। ফিরে এসে নিজের দায়িত্বে খানা জারী করতে হবে।
১৫। কোন ছাত্র যদি ছুটি নিয়ে বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার বাড়ী যেতে চায় তাহলে শুক্রবার আসরের পূর্বেই মাদরাসায় পৌছাতে হবে।
২৮. ছাত্রাবাসের দায়িত্বশীলদের জিম্মাদারীঃ
১। নেগরানগন মাঝে মাঝে ছাত্রদরে হাজিরা নিবেন।
২। আমলের নেগরানী: ছাত্রদেরককে তাকবীরে উলার সঙ্গে জামাআতে শরীক হওয়ার জন্য তাকীদ করতে থাকবেন। এবং এ ব্যাপারে পূর্ণ তৎপর ও সতর্ক থাকবেন। আমলী মশকের মাধ্যমে নামাযের জরুরী মাসায়েলের তালীম দিবেন এবং তাদের চুল- দাড়ী, লেবাস-পোষাক শরীয়াত মুতাবেক আছে কিনা লক্ষ্য রাখবেন। সালাম আদান প্রদানের ব্যাপারে যত্নবান কিনা তাও খেয়াল রাখবেন। মোদ্দাকথা, ছাত্রগণ সকল ক্ষেত্রে সুন্নাতের অনুসারী কিনা তার নেগরানী করবেন এবং সুন্নাতের তালমি দিবেন।
৩। আখলাকের নেগরানী: মাদরাসার সকল ছাত্র একে অপরের ভাই ভাই হিসাবে থাকবে। কারো সাথে না দোস্তী থাকবে, না দুশমনী। আপোশে লড়াই ঝগড়া করতে পারবে না। নেগরানের অনুমতি ব্যতীত আপোষ করষের লেনদেন করতে পারবে না। অন্যের জিনিস বিনা অনুমতিতে নিতে পারবে না। নেগরান উল্লেখিত বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি রাখবেন। এবং ছাত্রদের আকীদা, আখলাক ও মুআশারাতের তালীম দিবেন।
৪। নাযাফাতের নেগরানী: ছাত্রগণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার ইহতিমাম করবে। নিজের শরীর ও লেবাস-পোশাক পাক-সাফ রাখবে। ঢিলা-কুলুখের ইহতিমাম করবে। তাছাড়া ও তার আশপাশ পরিস্কার রাখবে। যেখোনে সেখানে থুথু, কফ, ময়লা ফেলে পরিবেশ নোংরা করবে না। ঝুটা ও কাগজপত্র নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবে। উল্লেখিত বিষয়ের প্রতি নেগরান খেয়াল রাখবেন।
৫। নেগরান শাস্তিমূলক খানা বন্ধের এখতিয়ার রাখবেন। অবশ্য খানা বন্ধা বা জারী সংশ্লিষ্ট জিম্মাদারের মাধ্যমে হতে হবে।
৬। কেতান নেগরান তার দায়িত্বাধীন ছাত্রকে শুক্রবারের জন্যে মৌখিক ছুটি দিলে তিনি সে ছাত্রকে দিয়ে বোডিং-এর খানা বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। সে ছাত্র খানা বন্ধ না করে গেলে জারীকৃত খানার টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত বোর্ডিং-এ তার খানা জারী হবে না।
৭। ছাত্রগণ জামাআতের ইহতিমাম করছে কিনা এ ব্যাপারে সকল নেগরান সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। বিশেষ করে নাযেমে দারুল ইকামা এ বিষয়ে দৃষ্টি রাখবেন।
৮। ছাত্রগণ জামাআতের ঘুমানো ও ঘুম থেকে উঠার ব্যাপারে কানুনের পাবন্দী করছে কিনা এ ব্যাপারের জিম্মাদারগণ কঠোরভাবে দৃষ্টি রাখবেন। রাত্র ১০টায় সকলে উপস্থিত আছে কিনা তার তদারকী করিয়ে রুম বন্ধ করিয়ে দিবেন।
৯। ছাত্রদের ঢিলা কুলুখের ব্যাপারে ক্রটি এবং খানা-পিনার আদব রক্ষায় ক্রটি করছে কিনা তেমনি ভাবে উজু এস্তঞ্জার ব্যাপারে ক্রুটি করছে কিনা নেগরানগণ এগুলোর প্রতি খেয়াল রাখবেন।
১০। প্রত্যেক হাজিরা খাতা নাযেমে দারুল ইকামা মাসে কমপক্ষে একবার করে দেখবেন।
১১। মাসবুকদের ঠিক করার জন্য সকল নেগরানগণ বাদ ইশা এ ব্যাপারে খরবদারী করবেন।
১২। ফজরের আযানের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদেরকে উঠিযে দেয়ার সুষ্টু ব্যবস্থা করবেন।
১৩। নামাযের পর নির্ধারিত জিম্মাদার উস্তাদহন রুমে এসে চেক করবেন যে কোন চাত্র রুমে থেকে গেল কিনা। মাঝেমাঝে বাদ নামাজ মসজিদেও হাজিরা ডাকবেন।
১৪। প্রত্যেক নেগরান যে সমস্ত চাত্র বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে চলে যাবে তাদেরকে ছুটি দেয়ার সময় খানা বন্ধ করে যাওয়ার জন্য বলবেন। সে বন্ধ করল কিনা তা দেখার জন্য জিম্মাদারকে দায়িত্ব দিবেন।
১৫। হিফয ও মক্তব বিভাগে সকালে নাস্তার পর ও বাদ মাগরিব প্রত্যহ ২ বার হাজিরা নেয়া জরুরী।
১৬। কোন ছাত্র পালালে সঙ্গে সঙ্গে দফতরে এত্তেলা দেবে। গার্জিয়ানকে জানানো হবে। দরকার পড়লে থানায় জিডি করতে হবে।
১৭। হিফযখানা, মক্তব ও এবতেদায়ী মামাআতের নেগরানগণ নিজ নিজ জিম্মায় ছাত্রদের গোসল, খানা-পিনা ইত্যাদি সম্পর্কে খোজ-খবর নিবেন এবং বিকেরে নেগরানরি জন্য হিফয খানা থেকে একজন উস্তাদ ও মক্তব থেকে এক বা একাধিক উস্তাদ দায়িত্বে থাকবেন।
১৮। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ছাত্রগন তাকরার ও মুতালাআর মধ্যে কাটাবে অযথা বাইরে ঘেরাফেরা করতে পারবে না। এ ব্যাপারে প্রত্যেক নেগরান ছাত্রদেরেক নসীহত করতে থাকবেন এবং তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখবেন।
১৯। সবকের মধ্যে যুযাকারার ব্যবস্থা করতে হবে। উস্তাদ সংশ্লিষ্ট কিতাবে দক্ষতার অর্জনের লক্ষ্যে ছাত্রদেরকে অন্য বিষয়ে সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। যেমন আদবের কিতাবের উস্তাদ ঘন্টায় নাহব সরফ নিয়ে নাইহবের উস্তাদ আদব ও সরফ নিয়ে এবং সরফে৳র উস্তাদ আদব ও নাহবের বিষয় আলোচনা করবেন।
২০। নেগরান উস্তাদগণ ছাত্রদের তাকরারের তদারকী করবেন। যাতে ছাত্রগণ তাকরারের নামে অন্য আলোচনার সুযোগ না পায় এবং তাকরারের জন্য ৩/৪ জনের ছোট ছোট জামাত বানিয়ে দিবেন।
২৯. হিফয বিভাগের কানূন সমূহঃ
১। যে সমস্ত ছাত্র পূর্ণ কুরআন মাজীদ তাজবদি সহকারে হদর পড়ার উপযুক্ত বিবেচিত হবে বয়স ১৩ বৎসরের উর্ধে না হবে এবং মেধা তালিকায় উচ্চমানের হবে। ঐ সমস্ত ছাত্রদের হিফয বিভাগে ভর্তির অনুমতি দেয়া হবে।
২। হিফজ বিভাগের নেসাব নিম্নরূপ (কমপক্ষে)
১ম বছর = ৮ পারা, ২য় বছর = ১০ পারা, ৩য় বছর ১২ পারা, পরবর্তী এক বছর শুনানো। ব্যতিক্রমে অর্থাৎ নেসাব থেকে কম হলে অত্র মাদরাসায় হিফজ বিভাগে পড়ার সুযোগ থেকে সে বঞ্চিত হবে।
৩। রীতিমত সবক, আমুখতা সাত সবক শুনানো অপরিহার্য।
৪। হিফয খানার ঐ সমস্ত ছাত্র ভর্তি হতে পারবে যারা হিফজ শেষ করে কওমী মাদরাসায পড়ে হক্কানী আলেম হওয়ার দৃঢ় সংকল্প রাখে।
৫। হিফজ রুটিন:
মাগরিব বাদ ইশার আযান পর্যন্ত: সবক ইয়াদ
অতঃপর ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা: নামাজ খানা-পিনা।
অতঃপর রাত ১০টা পযৃন্ত: তেলাওয়াত
রাত ১০ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত ঘুম।
ভোর ৪টা থেকে ফজর পর্যন্ত: উজু ইস্তেঞ্জা ও ১৫ মিটিন সবক শুনানো।
অতঃপর নাস্তা পর্যন্ত: বাকী সবক, সাত সবক শুনানো
নাস্তার পর: বাকী সাত সবক শুনানো ৯ টা পর্যন্ত।
৯.০০-১০.৩০ পর্যন্ত: তাজবীদ ইত্যাদি শিক্ষা করা।
১০.০০-১২.০০ টা পর্যন্ত: ঘুম।
১২.০০-১.০০ পর্যন্ত: আমুখতা শুনানো।
যোহর-আসর পযন্ত: আমুখতা শুনানো।
আসর-মাগরিব: বিরতী ও তাফরীহ
ফারেগীনরা রাহে নাজাত পড়বে।
প্রতি বৃহস্পতিবার বিকাল শুক্রবার ইশা পর্যন্ত সাপ্তাহিক দাওর। উল্লেখ্য মওসুমের পরিবর্তনের রুটিনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হতে পারে।
৬। হিফজ বিভাগের সকল ছাত্র নিজ উস্তাদের সম্মুখে বসে সবক সাত সবক ও আমুখতা ইয়াদ করবে। বাড়িতে বা অন্য কোথাও ইয়াদ করতে পারবে না।
৭। পড়ার সময় উস্তাদ অনুপস্থিত থাকলেও রীতিমত পড়তে থাকবে, এদিক ওদিক তাকাবে না। আপোষে গল্প গুযব করবে না। বিনা দরকারে বাইরেও যাবে না।
৮। আপোষে একে অপরকে পড়া বলে দিতে বা শুনতে কখনও অবহলো করবে না।
৯। সম্পূর্ণ কুরআনের হাফিযগণ নিচের ছাত্রদের সবক সহীহ করে দিবে। সহীহ করার পর উস্তাদগণকে শুনাবে। সবকে ভুল থাকলে শ্রবনকারীকে কৈফিয়াত দিতে হবে।
৩০. বোর্ডিংএর কানূণ সমূহ :
১। কিতাব বিভাগে ও হিফয বিভাগে ফুল/হাফ খানার উপযুক্ত ছাত্রদের মুহতামিম বরারবর দরখাস্তের মাধ্যমে মঞ্জুরী পাওয়ার পর বোর্ডিং থেকে ২ বেল খানা জারী করা হবে। নতুবা খরচা দিয়ে খানা খেতে পারবে।
২। সকালের খানা গরমকালে সকাল ৮টায় ও শীতকালে সকাল ৮:৩০ টায়। দুপুরের খানা জোহর বাদ এবং রাতের খানা ইশা বাদ দেয়া হবে।
৩। খানার ধরন:
৪। বোডিং-এর খানা লাইন ধরে সুশৃঙখলভাবে নিতে হবে। অথবা প্রত্যেক জামাআত তাদের ভিন্ন পাত্রে খানা উঠিয়ে নিজেরা বণ্টন করতে পারবে।
৫। কেউ বাড়ী বা অন্য কোথাও গেলে বোর্ডিংয়ে খানা বন্ধ যেতে হবে অনথ্যায় বোর্ডিংয়ে খানা জারী আছে বলে গণ্য হবে এবং উক্ত জারী থাকা খানার টাকা বোর্ডিংয়ে জমা দিতে হবে। আর যারা বোর্ডিংয়ে ফ্রি খানা খায় তাদের ঐ কয় বেলা খানা বন্ধ থাকবে।
৬। মাদরাসার বন্ধের পর খোলার তারিখে ১ম ঘণ্টা শুরু হওয়ার পূর্বেই বোর্ডিংয়ে খানা জারী করতে হবে। অন্যথায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য খানা বন্ধ থাকবে।
৭। যাদের গায়রে হাজিরির কারণে বোর্ডিং-এ খানা বন্ধ হয়ে যাবে তারা দ্বিতীয়বার খানা জারী করতে চাইলে প্রদত্ত শাস্তি শেষ হওয়ার পর দরখাস্ত লিখে নেগরান থেকে সুপারিশের মাধ্যমে মুহতামিমের মঞ্জুরী নিয়ে খানা জারী করতে পারবে।
৮। খানার টাকা শেষ হওয়ার ৩ দিন পূর্বেই বোর্ডিংয়ে অগ্রীম টাকা জমা দিতে হবে। নতুবা টাকা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই খানা বন্ধ হয়ে যাবে।
৯। সর্বাবস্থায় বোর্ডিং-এ টাকা জমা দিয়ে বোর্ডিং ম্যানেজার থেকে অবশ্যই রশিদ গ্রহণ করবে।
১০। বোডিং থেকে যে খাবার ব্যবস্থা করা হয় সেটাকে গনীমত মনে করবে। কখনো খানার অভিযোগ করবে না। একান্ত অসুবিধা হলে মোহতামিম সাহেবকে অবগত করাবে।
৩১. পরীক্ষার কানূণসমূহ:
১। সেমাহী ও শশমাহী পরীক্ষায় চাত্রদের পরীক্ষার পরচার ভুল সমূহ ধরিয়ে দিয়ে সংশোধন করে দিতে হবে। কিন্তু পরচা দেয়া যাবে না।
২। বিশেষ ওজরের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছাত্রদের দরখাস্ত দফতরে তা’লীমের জমা থাকবে।
৩। সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কমপক্ষে ৪টি প্রশ্ন থাকতে হবে। যার তিনটির উত্তর লেখা জরুরী।
৪। প্রথম জামায়াতের প্রশ্ন বাংলায়, তাপরে ৪ জামায়াতের প্রশ্ন উর্দুতে ও বাকী জামাআতের প্রশ্ন আরবীতে করতে হবে।
৫। পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন বোঝার দরকার হলে শুধু ১ম ঘন্টায় বুঝে নিতে হবে এবং কোন প্রয়োজনে স্ব-স্ব স্থান দাড়িয়ে থাকবে। নেগরানগণ প্রয়োজন মেটাবে।
৬। মাসিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্রদের নেগরান কর্তৃক কৈফিয়ত তলব করা হবে।
৭। হিফয বিভাগে যে যতটুকু পড়েছে তার ততটুকু পরীক্ষা নিতে হবে।
৮। পরীক্ষকগণ পরীক্ষার খাতা দফতরে তা’লমিাতে জমা দিবে কোন পরীক্ষার্থীর পরচার ব্যাপারে আপত্তি থাকলে নাযেমে তা’লীমাত সংশ্লিষ্ট পরীক্ষক থেকে কারণ যাচাই করে পরীক্ষার্থীকে জানাবে।
৯। পরীক্ষার্থীরা পরস্পরের কথা বলেলে তাদের সিট পরিবর্তন করাহবে অথবা মুনাসেব শাস্তি প্রয়োগ করা হবে।
১০। পরীক্ষার শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিটের পূর্বে টুনটুনি দেয়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই হলে প্রবেশ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে কোন পরীক্ষাথীকে হলে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। তবে নেগরানে আ’লা মুনাসেব মনে করলে উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করতে পারেন।
১১। সকল পরীক্ষার্তীকে প্রবেশ পত্র নিয়ে হলে প্রবেশের অনুমতি থাকবে। যে কোন প্রকার কিতাব ও কাগজপত্র নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
১২। কোন ছাত্রের কাছে কোন ধরনের নকল পাওয়া গেলে উক্ত পরীক্ষাসহ তার পেছনের সকল কিতাবের পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে। এবং সামনের কিতাবগুলির পরীক্ষা দিতে পারবে না।
১৩। নেগরানগন পরীক্ষা শুরু হওয়ার কমপক্ষে ১৫ মিনিট পূর্বে পরীক্ষার হলে পৌছে যাবেন।
১৪। ১ম ও ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফলাফল মাদরাসা খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।
৩২. মাদরাসা বন্ধের কানূণ সমূহ:
১। কুরবানী উপলক্ষে মাদরাসা ১১ই জিলহজ্জ থেকে ১০ দিন বন্ধ থাকবে।
২। ১ম সাময়িক পষার পর ৭ দিন দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার পর ৮ দিন ও বার্ষিক পরীক্ষার পর কিতাব বিভাগে ২১শে শাবান থেকে ৯ই শাওয়াল পর্যন্ত, হিফজ বিভাগ, নূরানী মন্তব বিভাগ ও নাযেরা বিভাগ শবে-বরাতের পর বন্ধ থাকবে। ৬ দিন ও তার পর ২৬শে রমযান থেকে ৯ই শাওয়াল পর্যন্ত পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
৩। প্রত্যেক বন্ধে মাদরাসা পাহারা দেয়ার জন্য ছাত্র শিক্ষকের একটি গ্রুপ মাদরাসায় থাকা জরুরী। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা মাদরাসা কর্তৃকপক্ষ করবে।
৪। প্রত্যেক বন্ধের পর মাদরাসা খোলার দিন যথারীতি সবক চলবে। সুতরাং সকল ছাত্র শিক্ষক বন্ধের শেষ দিন মাদরাসায় উপস্থিত থাকা একান্ত জরুরী।
৩৩. শিক্ষক ছুটির তালিকা:
১। রুখসাতে এত্তেফাকী (সাধারণ ছুটি): তাকাররুর হওয়ার পর সাধারনত এক বছর পর প্রত্যেক উস্তাদ বছরে দিন পূর্ণ বেতনসহ রুখসাতে এত্তেফাকী পাবেন। উক্ত ছুট পাওনা থাকলে মাসিক দু দিন হিসাবে একসঙ্গে ৬ দিন পর্যন্ত ছুটি ভোগ করতে পারবেন। রুখসাতে এত্তেফাকী পরবর্তী বছরে সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে না।
২। রুখসাতে উমুরে যাতি শিক্ষকগণ নিজস্ব বিশেষ প্রয়োজনে বছরে এক মাস অর্ধেক বেতনসহ ছুটি পাবেন কিন্তু একসঙ্গে ১০ দিনের বেশী।
৩। রুখসাতে এজাজী (সম্মানী ছুটি) কোন শিক্ষক কে মাদরাসার প্রয়োজনে কোথাও প্রেরণ করলে অথবা হজ্জ ফরয হলে ৩০ দিন অথবা চিল্লায় যেতে চাইলে ৪০ দিন পূর্ন বেতনসহ ছুটি পাবেন।
৪। সাধারণ ছুটি ও বিশেষ প্রয়োজনে ছুটি কোন বন্ধের বা খোলার দিন সঙ্গে সংযুক্ত হবে না। কেউ নেহায়েত ওজর ব্যতীত এরূপ করলে অর্থাৎ বন্ধ ও খোলার দিন অনুপস্থিত থাকলে বন্ধের পূর্ন বেতন এবং যে কোন একদিকে অনুপস্থিত থাকলে বন্ধের অর্ধেক বেতন কতিত হবে। অবশ্য কারো মারাত্নক ওজর থাকলে তার বিষয় মাজলিসে ইলমী বিবেচনা করবে।
৩৪. সাফাইয়ের কানুণ সমূহ:
সংশ্লিষ্ট কামরার ছাত্ররা তাদের রুটিন মুতাবেক দরস শুরু হওয়ার পূর্বেই তাদের রুম ভালোভাবে পরিস্কার করবে।
ক) কামরার ভেথর পরিস্কার রাখার পদ্ধতি:
১। একান্ত প্রয়োজনীয় সামানা ছাড়া অন্য কোন সামান রুমে রাখবে না।
২। মালিক বিহীন কোন বস্তু রুমে থাকলে নেগরানকে জানিয়ে তা অন্যত্র সরিয়ে দিবে।
৩। পাঠ্য বছরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিতাব খাতা ছাড়া অন্য কোন বইপত্র রাখবে না।
৪। জানালা বরাবর কোন কাপড় ঝুলিয়ে রাখবে না।
৫। ভেজা কাপড় শুকানোর পর তা ভাজ করে নিজ দায়িত্বে ঘুছিয়ে রাখবে।
৬। ব্যবহৃত কাপড় যথায় তথায় ফেলে রাখবে না, বরং ভাজ করে র‌্যাকে বা বালিশের নিচে রাখবে। শুকনো কাপড় বারান্দায় ফেলে রাখবে না। ট্যাংক বা বালিশের নিচে রাখবে।
৭। কোন ছাত্র ২টি লুঙ্গি, ১টি গামছা, ৩টি পাঞ্জাবী/ জামা ও ১টি সেলোয়ারের অতিরিক্ত কোন কাপড় মাদরাসায় রাখবে না। ১টি ট্রাংক ২৪ ইঞ্চি বেশি যেন না হয়।
৮। বেডিং পত্র ঘুমানোর সময় ছাড়া অন্য সময় সাজিয়ে গুছিয়ে রাখে।
৯। কিতাব খাতা যথায় তথায় ফেলে রাখবে না। নিজে হেফাযতে রাখবে।
১০। কোন কাগজ চাটাই ইত্যাদির টুকরা কামারায় পড়ে থাকবে না।
১১। দৈনিক কমপক্ষে ২ বার ঝাড়-দিবে।
১২। কোন সামান বারান্দায় রাখবে না।
১৩। ঘর ঝাড়-দেয়ার সঙ্গে সামরার ছাদ, র‌্যাক ইত্যাদিও ঝাড় দিবে।
১৪। ছেড়া কাগজ কাগজদানীতে রাখবে।
১৫। থুথু কফ ফেলার জন্য থুকদানী রাখবে।
খ) দফতর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পদ্ধতি:
১। দফতর কর্মকর্তাগণ দফতর কমীদের দ্বারা সর্বদা দফতর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখবে।
২। সপ্তাহে এক দিন চাঁদর পরিস্কার করবে।
৩। প্রতিদিন ২/৩ বার ডেক্স ও অন্যান্য সামানাগুলি মুছে দিবে।
গ) বাথরুম পরিস্কার রাখার পদ্ধতি:
১। পায়খানা-পেশার করার আগে ময়লার স্থানে কিছু পানি ঢেলে দিবে।
২। ঢিলা কুলুখ নির্ধারিত পাত্রে ফেলবে।
৩। পায়খানা করার পর প্যান ভালোভাবে পরিস্কার করে বের হবে।
৪। শৌচকার্যের পর হাত সাবান দ্বারা ভালভাবে পরিস্কার করবে।
৫। নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোথাও মলমূত্র ত্যাগ করা দন্ডনীয় অপরাধ।
ঘ) রুমের আশপাশ ও আঙ্গিনা পরিস্কার রাখার পদ্ধতি:
প্রতি শুক্রবার সংশ্লিষ্ট জিম্মাদার ছাত্রগণ বাসস্থানের চর্তুপাশ জানালা দরজা ও আঙ্গিনা সকাল ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে ভালোভাবে পরিস্কার করবে।
৩৫. মাদরাসার রেজিষ্টার সমূহ:
ক) রসিদ এন্ট্রি বহি (খ) রশিদ লেনদেন বহি (গ) ক্যাশ বুক (ঘ) লেজার বুক (ঙ) শিক্ষক হাজিরা বহি (চ) বেতন বহি (ছ) ছুটি বহি (জ) দাখিলা রেজিষ্টার) (ঝ) দরজাবন্দি (ঞ) ছাত্র হাজিরা খাতা (ট) বোডিং হাজিরা খাতা (ঠ) ছাত্রদের রিপোর্ট খাতা (ড) দারুল ইকামার হাজিরা খাতা (ঢ) সকল পরিষদের রেজুলেশন খাতা (ণ) নোটিশ খাতা।
হোয়াটসাঅ্যাপ চ্যাট
মেসেঞ্জার চ্যাট